বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রামের অসহায় দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিতমানুষদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্র অসাধু স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। এই চক্রের অন্যতম সদস্য মোঃ মাহমুদুল শেখ (৪৫)।
জানা যায়, কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বীরভদ্রঘাট গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র মাহমুদুল শেখ প্রায় ১ বছর ধরে ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ করে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে আসছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে সদস্য প্রতি ১ লক্ষ টাকা প্রদান করবে এমনই তথ্য দিচ্ছেন অসাধু চক্রটির সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে তিনি এবং তার ছেলে মিলে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটা ফরমে ভদ্রঘাট ইউনিয়ন সহ আশে পাশের অনেকের ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য নিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করছেন।
এ সময় তার কাছে দুইটা ফরম পাওয়া যায়, যেখানে সদস্যদের নামের তালিকা রয়েছে।অহিংস গণঅভ্যুথান বাংলাদেশ অনিবন্ধিত সংগঠনের ফর্ম অনুযায়ী জানা যায়, সেখানে উল্লেখিত রয়েছে- পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন।
বিপুল ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ অহিংস সাংবিধানিক পন্থায় আইনের দ্বারা গঠিতব্য “অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা” বরাবরে পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন।ভ্যাট, ট্যাক্স, সেবার নামে সর্বস্তরের জনগণ থেকে আদায় করা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একটি বড় অংশ, স্বাধীনতার পর থেকেই, লুটপাট ও বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনগণের কষ্টার্জিত এসব অর্থ প্রস্তাবিত জাতীয় সংস্থা কর্তৃক উদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে বিনা সুদে, বিনা জামানতে, সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ১ (এক) লক্ষ টাকা থেকে ১ (এক) কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের মাধ্যমে পুঁজির যোগান দেয়ার পরিকল্পিত কর্মসূচির আওতায় ঋণ পেতে আগ্রহীদের আবেদনের -“ছক” ফটোকপি করে বিতরণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি অথবা অন্য কোন কাগজ নেয়া যাবে না।“ছক” পূরণ করে ২ (দুই) কপি ফটোকপি করতে হবে। ১ (এক) কপি সংগঠকের কাছে থাকবে এবং ১ (এক) কপি “অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ”, কেন্দ্রীয় কার্যালয়: বাড়ি-১ (দোতলা), রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা, মোবাইল-০১৩০৮৬২৬৯২৪ ঠিকানায় পাঠাতে হবে, যা আইনের দ্বারা গঠিতব্য জাতীয় সংস্থার নিকট অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও জনগণকে পুঁজি দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জমা দেয়া হবে ।
এছাড়াও উদ্ধার ও জনগণকে পুজি দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই কাজে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। কেউ করলে তাকে থানায় সোপর্দ করুন। বিস্তারিত জানতে এবং ‘প্রচারপত্র’, ‘নির্ধারিত ছক’, ‘আইনের খসড়া’ ও সমাবেশ করার ‘প্রশাসনিক অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে যোগাযোগ করুন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, মোবাইল: ০১৯৫৭-৯৫৯৬৩২, অধ্যাপক এডভোকেট জিয়াউর রহমান, ০১৯৯৬-৩৬০০৩৭, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, ০১৭১১৭৩৪ ০৯৫, কামাল হোসেন আজাদ, ০১৭৪২-৯৭০২৫২। প্রত্যেক শনিবার সকাল ১০টায় এবং মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা হয়। অংশগ্রহণ করুন। YouTube খুলে “অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ” লিখে সার্স করে ১০ (দশ) টি ভিডিও দেখুন এবং SUBSCRIBE করুন ভিডিও অন্যদের দেখান এবং SUBSCRIBE করতে অনুরোধ করুন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে তালিকা করছেন, অনেকের থেকে তালিকার নামে টাকাও নিয়েছেন ঋণ দেওয়ার আশ্বাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সদস্য ঋণ পাননি। সদস্যরা জানতে চাইলে বলেন- কিছুদিনের ভিতরেই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবেন এবং তাদেরকে ঢাকা শাহবাগে নিয়ে সমাবেশ করার কথাও বলেছেন।
সদস্যদের অভিযোগ- ড. মো: ইউনুস সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে অনিবন্ধিত সংগঠনের নামে আমাদের আইডি কার্ড ব্যবহার করে কেন হয়রানি করা হলো, এ ব্যাপারে আমরা আইনের সহায়তা প্রত্যাশা করছি। যেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
মাহমুদুল শেখ বলেন, আমার কোন নিয়োগ পত্র নেই। কিন্তু আমি আমার গ্রামের যারা সালিশি বৈঠক করেন। তাদের সাথে কথা বলে, একটি বৈঠক করে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে- এই সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি। এখনো কেউ ঋণ পাননি তবে ভবিষ্যতে পাবেন বলে আশা রাখি।
সালিশি বৈঠকের অন্যতম সদস্য মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, আমাদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন কিন্তু এই সংগঠনের নিবন্ধন, কার্যক্রম, সম্পর্কে আমরা কেউই অবগত নই। তবে মানুষ জনের থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তালিকা করেন এ ব্যাপারে আমরা জানি। সংগঠনটি কতটা যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে আমরাও জানতে চাই।
তিনি শেরপুর বগুড়ার শাহনাজ পারভীনের আওতায় কাজ করেন কিন্তু তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়েও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
অহিংস গনঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ এর সংগঠক আবুল বাশার মুঠোফোনে জানায়, আমরা দেশের একজন নাগরিক, আমাদের সংগঠন অথবা স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মরত ব্যক্তিদের এর বাইরে কোন পরিচয় পত্র লাগেনা।
প্রতিবেদক- সংগঠনের নিবন্ধন, কর্মীদের পরিচয় ও কার্যকারিতা, সদস্য সংগ্রহের কারণ এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কল কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়না।
শাহীন সুলতানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নেই, প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমরা এ ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ঝর্ণা আক্তার/ আজকের সিরাজগঞ্জ