চলতি বর্ষা মৌসুমে তাড়াশ চলনবিলে দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তাড়াশ উপজেলার ছোট-বড় হাটবাজারে গেলেই দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্যে দেধারসে বিক্রি হচ্ছে একদম ছোট ছোট দেশী মাছ। দেশীয় মাছ নিধনের নেপথ্যে নিরব ঘাতকের ন্যায় চায়না দুয়ারী বা রিং নামক ফাঁদ জাল স্থানীয় মাছ শিকারিরা ব্যবহার করছে। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই ফাঁদ ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্বসংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় চলনবিলেব জুড়ে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এই জাল। এধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। চলনবিলে থাকা সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম এই জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে পানি কম থাকায় চলতি মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারী নামক জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের নদ-নদী ও খাল-বিল। চায়না দুয়ারী জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা এবং ৫০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার চারটি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়। এই ফাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, নদীর তলদেশে লম্বালম্বিভাবে লেগে থাকে। ফলে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকে আটকা পড়ে। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় মাছের খাবার দিয়ে থাকে।একটি চায়না দুয়ারীর দাম (মানভেদে) ৪-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, চায়না দুয়ারীতে সব ধরনের মাছ ছেঁকে ওঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে বর্তমানে এ দুয়ারী ব্যবহার করছেন। এছাড়াও অনেক সৌখিন মৌসুমি মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যারা পুরোনো কৌশলে মাছ ধরতেন, তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারী কিনছেন।
হামকুড়িয়া প্রাঃ বিদ্যাঃ প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম জানান, বিকেল হলেই ছোট ছোট ডিঙিতে করে এই চায়না দুয়ারী বিলের পানিতে ফেলা হয়। সারা রাত বিলে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব ধরনের মাছ, এমনকি বিলে থাকা পরিবেশ বান্ধব উপকারী বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণীও ছেঁকে ওঠে। তার ধারণা এই জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো উনমুক্ত জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতি মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারি জেলেরা বলেন, চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি।তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মশগুল আজাদ বলেন, চায়না দুয়ারী বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই বাজারে বিক্রি বন্ধে কারেন্ট জালের মতো কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে নদীতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাছ ধ্বংসের ধারা প্রয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। আমরা সেভাবেই অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এছাড়া প্রাথমিকভাবে সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলমান রয়েছে।
ঝর্ণা আক্তার/ আজকের সিরাজগঞ্জ