ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। চিরাচরিত এই উক্তি সর্বজনীন। ঈদের এমন আনন্দ এখন ঘরে ঘরে হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। মেলে না ছুটি। উৎসব আনন্দে শামিল হতে পারেন না প্রিয়জনের সঙ্গে। পেশাগত দায়িত্ব পালনেই তৎপর থাকতে হয় তাদের। কর্মস্থলেই পার করতে হয় প্রতি বছরের ঈদ। বিশেষ দিনগুলোতেও অফিস কিংবা অফিসের বাইরে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের।
বলছিলাম সিরাজগঞ্জের নয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কথা। ২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাথায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। অব্যাহতি দেওয়া হয় পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদেরও। বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। ফলে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পড়ে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত ইউএনওদের কাঁধে।
বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার নয়টি উপজেলার ইউএনওরা এবার স্বজনদের ছেড়ে নিজ কর্মস্থলেই ঈদ উদযাপন করেছেন। কারও ছুটি মেলেনি। তবুও তারা বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন।
এসব উপজেলার ইউএনওরা হলেন- সিরাজগঞ্জ সদরের মনোয়ার হোসেন, কাজীপুরের দেওয়ান আকরামুল হক, রায়গঞ্জের হুমায়ুন কবির, তাড়াশের নুরুল ইসলাম, উল্লাপাড়ার আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত, কামারখন্দের অনামিকা নজরুল, শাহজাদপুরের কামরুজ্জামান, বেলকুচির আফিয়া সুলতানা কেয়া ও চৌহালীর মোস্তাফিজুর রহমান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যও মানুষ সবার আগে ছুটছেন ইউএনওদের কাছে। এখন যেন জনসাধারণের একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনওরা। আইনের মধ্যে থেকেই ইউএনওরা স্ব-স্ব এলাকার জনগণের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং ৮ থেকে ১০টি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র। তবে তারা না থাকায় বর্তমানে সব কমিটিসহ ১৮০-২০০ পদের দায়িত্ব এখন ইউএনওদের কাঁধে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, মাতৃত্ব ভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিটা, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, বিডব্লিউবিসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। এখন সমন্বয় সভাও পরিচালনা করতে হচ্ছে। সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বও তাদের কাঁধে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চন্ডিদাসগাঁতী রিভারভিউ আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছাঃ তানজিনা সুলতানা বলেন, ইউএনও মনোয়ার হোসেন স্যার কলেজের সভাপতি হওয়ায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তার কাছে যেতে হয়। গেলেই দেখি তিনি নানান কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। একজন ইউএনও উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাকে এতো চাপের মধ্যে রাখা মোটেও ঠিক না। তবে অনেক চাপ থাকা শর্তেও তিনি সব কাজই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে করছেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ মানেই বাড়ি ফেরার টান। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মেতে উঠা। তবে ছুটি না থাকায় কর্মস্থলেই এবার ঈদ উদযাপন করেছি। এ নিয়ে তার কোন ক্ষোভ নেই। জনসাধারণের সেবায় কাজ করতে পারাই সবচেয়ে সন্তুষ্টির বিষয় বলে তিনি জানান।